প্রত্যেকটি ইমারতের চলাচলের জন্য সুষ্টু পরিসরের প্রয়োজন। ইমারতের এক কক্ষ থকে অন্য কক্ষে যাতায়াত করতে হয়। আগের দিনের বাড়িগুলো একতলা বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে বহুতল ভবন বেশী হচ্ছে। কারণ যে জায়গায় একতলা বাড়িতে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ বসবাস করতে পারে আর বহুতল বিশিষ্ট হলে সেখানে অনেক মানুষ অনায়াসে বসবাস করতে পারে। আর একতলা থেকে অন্য তলা যাতায়াত করা হয় সিড়ি দিয়ে। এর জন্য সিড়ি লিফট চলন্ত সিড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সিড়ির প্রত্যেকটি ইমারতের থাকে আর লিফট বা চলন্ত সিড়ি থাকতে পারে না প্রত্যেকটি ভবনে।
Stair Case বা লিফটের উদ্দেশ্য হলোঃ
(১) ইমারতের একতলা থেকে অন্য তলাতে যাতায়াতের জন্য।
(২) ইমারতের বিভিন্ন তলাতে দ্রুত ও নিরাপদভাবে উঠানামার জন্য।
(৩) ইমারতের ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় আসবাপত্র ও দ্রব্যসামগ্রী নামানো ও উঠানোর জন্য।
লিফট বর্তমান যুগে শহরের মানুষদের জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। লিফট এর মাধ্যমে আমরা একতলা থেকে অন্য তলায় অনায়াসে যাতায়াত করতে পারি খুবই কম সময়ে। কিন্তু বর্তমানে বিশেষ করে শহর এলাকার মানুষ ভবনের জন্য একতলা থেকে অন্য তলায় যাওয়ার জন্য লিফট বা এলিভেটর ব্যবহার করে থাকে। দালানের একতলা থেকে অন্য তলায় বা এক মেঝে থেকে অন্য মেঝেতে নিরাপদে ও অনায়াসে যাতায়াতের জন্য কতকগুলো ধাপের সাহায্যে যে পথ নিমার্ণ করা হয় তাকে Stair বা সিড়ি বলে। আর এই সিড়ি দালানের যে জায়গায় নিমার্ণ করা হয়, তাকে সিড়িঘর বলে। পানি পড়া বা রোদ লাগাকে প্রতিরোধ করার জন্য সিড়ির আচ্ছাদন হিসেবে ছাদের উপর উচু ঘরকে সিড়ি ঘর বা চিলা-কোঠা বলে। একতলা বাড়িতে ছাদে উঠার প্রয়োজন না থাকলে সিড়ি ঘর না করলেও চলে। কিন্তু যে স্থলে ছাদের উঠার থাকে, অর্থাৎ দুই বা ততোধিক তলা বিশিষ্ট দালানের ক্ষেত্রে সিড়িঘর থাকা একান্ত আব্যশক। দালানের সম্মুখ দিকেই সিড়িঘর এর অবস্থান হওয়া উচিত। এটি একটি স্থায়ী কাঠামো। সুতরাং একে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে অতি সহজেই উপরে ও নিচে উঠানামা করা যায়। দালানের এমন জায়গায় সিড়ি নিমার্ণ করা উচিত যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়া যায়। তবে আবাসিক দালানের ক্ষেত্রে সিড়ি কেন্দ্রস্থলে এবং পাবলিক বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে সিড়ির রাস্তার দিকে থাকা উচিত। সিড়িতে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত প্রশস্ত হওয়া উচিত। তবে ৩টির কম ধাপ রাখা উচিত নয়। আর ল্যাংডিয়ের চওড়া ফ্লাইটের চওড়ার চেয়ে কম হওয়া উচিত নয়। আকূতি ও গঠনের দিক বিবেচনা করে সিড়িকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
(ক) একমুখী সিড়ি।
(খ) মোড় ফেরা সিড়ি।
Stair
একমুখী সিড়িঃ যে সমস্ত সিড়ির ধাপগুলো একই দিকে থাকে অর্থাৎ সিড়ির ধাপগুলো একমুখী এবং সিড়িগুলো বাড়ির একতলা থেকে অন্য তলায় সোজা হয়ে উঠে যায়, তাকে একমুখী সিড়ি বলে। এক ধরণের সিড়িতে মোড় ঘুরতে হয় না। যে সকল ইমারতের লোক চলাচল খুব কম বা সিড়ি নিমার্ণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায় না সে সমস্ত ক্ষেত্রে এই সকল সিড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া পুকুর ঘাটে, নদীর ঘাটে বা পাহাড়ি এলাকায় উচু স্থানে উঠানামার জন্য এটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অন্যান্য সিড়ির তুলনায় এই সিড়ির নিমার্ণ খরচ অনেক কম হয়ে থাকে। আর নিউয়েল কোয়ার্টার টার্ন সিড়ি এর ক্ষেত্রে যখন ফ্লাইটের দিক সমকোণ অর্থাৎ এতে পরিবর্তন করা হয় তখন তাকে কোয়ার্টার টান সিড়ি বলে। দিক পরিবর্তনের সময় কোয়ার্টার শেপস ল্যান্ডিং অথবা ওয়াইল্ডাস ব্যবহার করতে হয়। এ সিড়িতে প্রত্যেক ফ্লাইটের প্রারম্ভে এবং শেষ প্রান্তে যদি নিউয়েল পোস্ট ব্যবহার করা হয়, তকহন তাকে নিউয়েল কোয়ার্টার টান সিড়ি বলে। আর জিওমেট্রিক্যাল সিড়ির ক্ষেত্রে সাধারণত কনটিনিউয়াস হ্যান্ড রেইল থাকে। এতে ল্যান্ডিং এ কোনো নিউয়েল পোস্ট ব্যবহার করা হয় না। এর সবগুলো ধাপ ওয়াইন্ডার ধাপ। এটা পাবলিক বিল্ডিং এ ব্যবহার করা হয়। ডগ লেগড সিড়ির ক্ষেত্রে যখন এক ফ্লাইট হতে অন্য ফ্লাইট-এ যেতে হলে বিপরীমুখী হয়ে এর দিক পরিবর্তন করতে হয়, তখন যে সিড়ি নিমার্ণ করা হয়, তাকে হাফ টার্ন বা ডগ লেগড সিড়ি বলে। এর ল্যান্ডিং আয়তাকার বা দুই সারির চওড়ার সমান। Stair Case
ওয়েপ নিউয়েল হাফ টার্ন সিড়িঃ যখন একই সিড়িঘরে সিড়ি নিমার্ণ এবং লিফট স্থাপনের প্রয়োজন হয় তখন এ জাতীয় সিড়ি ব্যবহার করা হয়। লিফট বসানোর জন্য আয়তাকার জায়গা রেখে এর চতুদিকে ফ্লাইট তৈরি করা হয়। প্রত্যেক ফ্লাইট এর দিক পরিবর্তন এর স্থানে ল্যান্ডিং এর জায়গা দেয়া হয়। ফ্লাইট এর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন নিউয়েল বসানো হয়। এ প্রকার সিড়ির উপরের দিক থেকে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণত পাবলিক বিল্ডিং এ এই ধরণের সিড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। থ্রি কোয়ার্টার টান সিড়ির ক্ষেত্রে সাধারণত একতলা থেকে অন্য তলায় যাওয়ার সময় যে সমস্ত সিড়িতে তিনবার সমকোণে দিক পরিবর্তন করতে হয় তাকে থ্রি কোয়ার্টার সিড়ি বলা হয়ে থাকে। এ প্রকার সিড়ি নিউয়েল বা ওপেন নিউয়েল আকারে হয়ে থাকে। যখন সিড়িঘরের দৈর্ঘ্য সীমিত থাকে এবং দু মেঝের মধ্যবর্তী উচ্চতা খুবই বেশী থাকে তখন এ জাতীয় হয়ে থাকে। বাইফারকেটেড সিড়ির ক্ষেত্রে যে সিড়িতে প্রথমে বা নিম্ন ফ্লাইটে এক সেট চওড়া ধাপের মাধ্যমে ল্যান্ডিং পর্যন্ত উঠে তার দুই বিপরীত প্রান্ত থেকে অপেক্ষাকূত কম চওড়াবিশিষ্ট দুটি ফ্লাইটের সাহায্যে উপরিতলে উঠার ব্যবস্থা থাকে তাকে বাইফারকেটেড সিড়ি বলা হয়ে থাকে। এ সিড়ির প্রথম সারির সোজা ধাপ চওড়ায় অপেক্ষাকূত ছোট হয়। অত্যাধুনিক অভিজাত পাবলিক বিল্ডিং-এ এই সিড়ি ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া পাবলিক বিল্ডিং এর হলরুমের প্রবেশপথ, মার্কেটে, ওভার ব্রিজে ব্যবহার করা হয়।
স্পাইরাল সিড়িঃ প্রয়োজনীয় জায়গার অভবে যখন কোনো পোস্টের চতুদিকে ওয়াইন্ডার ধাপ প্রদান করে সিড়ি নিমার্ণ করা হয়, তাকে স্পাইরাল সিড়ি বলে। অর্থাৎ সিড়ি স্থাপনের জন্য যে পরিমাণে জায়গার দরকার তা না থাকলে এবং কাঠামোর বাইরে কোনো সু-উচ্চ স্থানে আরোহনের জন্য এ স্পাইরাল সিড়ি ব্যবহার করা হয়। এটা সাধারণত আরসিসি বা লোহার হয়ে থাকে। পানি ট্যাংকের উপরে উঠার জন্য, মসজিদের মিনারে উঠার জন্য, কলকারখানাতে, দালানের পিছনের দিকে ইত্যাদি জায়গায় এ জাতীয় সিড়ি ব্যবহার করা হয়। হেলিক্যাড সিড়ির ক্ষেত্রে এ প্রকার সিড়ি দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু কাঠামোগত ডিজাইন এবং নিমার্ণ খুবই কঠিন। এটা আরসিসি-এর তৈরি বিল্ডিং শিয়ার এর টরশন প্রতিরোধ করতে প্রচুর পরিমাণ ও বূহত্তর অংশ জুড়ে স্টিল ব্যবহার করতে হয়। যার ফলে খরচ অনেক বেশী হয় থাকে। নিম্নে সিড়ির বিভিন্ন উপাদান যেমন ট্রেড, রাইজার, হ্যান্ডরেইল, ব্যালাস্টার, ব্যালাস্টেড, নোজিং, স্কটিয়া, ওপেন স্টিং, ক্লোজড স্টিং, সফিট, ওয়াকিং লাইন, ওয়েস্ট স্ল্যাব, ল্যান্ডিং, ফ্লাইট, নিউয়েল পোস্ট, সানলাইট, হেডরুম, মেশিন রুম, লিফট পিট, ওয়েস্ট ওয়ে, লিফট কেবিন ইত্যাদি। স্টেপ এর উপরস্থ য অনুভূমিক অংশের উপর পা রেখে সিড়ি পথে উঠানামা করা হয়, তাকে ট্রেড বা গোয়িং বলে। নোজিং ছাড়া এ প্রস্থ ২৪সেমি থেকে ২৮সেমি এর মধ্যে রাখা হয়। পর পর দুটি
Stair Case ট্রেড এর মধ্যবর্তী উল্লম দূরতকে রাইজার বলা হয়। কিন্তু অনেক সময় স্টেপের সাপোট প্রদানকারী ভার্টিকেল অংশকে রাইজার হিসেবে এবং স্টেপের খাড়া দূরতকে রাইজ বলে।
ব্যালাস্টার ঃ হ্যান্ড রেইল এবং স্টিংগার বা সিড়ি বাহকের মধ্যবর্তী ফাকা অংশ খাড়াভাবে ব্যবহত সরু সরু মেম্বার বা পিলারকে বলে। এটি কাঠ বা মেটালের হয়ে থাকে। ঢালু হ্যান্ড রেইল বা স্টিংগারের মাঝের ফাকে সারিবদ্ধভাবে যদি ব্যালাস্টার বসানো হয় তবে তাকে ব্যালাস্টেড বলে। সিড়ির ফাক দিয়ে মানুষ পড়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করার জন্য এই কাজটি করানো হয়ে থাকে। নোজিংকে শক্তশালী করার জন্য এর নিচে যে মোল্ডিং ব্লক ব্যবহার করা হয়, তাকে স্কটিয়া ব্লক বলে। এটির ট্রেডের সোন্দর্য বাড়ায়। কাঠের তৈরি সিড়িকে সাপোট দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র ট্রেড এর উভয় পাশে এবং মধ্য বরাবর কাঠের তৈরি স্টিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এক ওপেন স্টিং বলে। এক্ষেত্রে রাইজ এর অংশ বা উচ্চতা ফাকা রেখে ট্রেড গুলোকে স্টিং এর সাথে যুক্ত করা হয়। ল্যান্ডিং বা চাতাল এর জন্য দুটি ফ্লোরে মধ্যবর্তী সিড়ির ফ্লাইট এর উপর অথবা নিচ প্রান্তে যে আনুভূমিক প্লাটফর্ম থাকে, তাকে ল্যান্ডিং বা চাতাল বলে। সিড়ি দিয়ে উঠানামা করার সময় দিক পরিবর্তন বা মধ্যবর্তী স্থানে সামান্য বিশ্রামের জন্য ল্যান্ডিং ব্যবহার করা হয়। এই ল্যান্ডিং যদি ধাপের সম্পূর্ণ চওড়া জুড়ে থাকে তবে তাকে হাফ সেসপেস ল্যান্ডিং এবং অর্ধেক জুড়ে ল্যান্ডিং ব্যবহার করা হয়। সিড়ি এবং ল্যান্ডিং এর প্রস্থ একই রাখা হয়।
0 Comments